মাথাব্যথা নাকি ব্রেন টিউমারের সংকেত? নিউরোসার্জনের মারাত্মক সতর্কবার্তা!

মাথাব্যথা নাকি ব্রেন টিউমারের সংকেত? নিউরোসার্জনের মারাত্মক সতর্কবার্তা!

মাথাব্যথা এমন একটি সমস্যা, যা প্রায় সবাই কোনো না কোনো সময়ে অনুভব করেছেন। সাধারণত এটি তেমন উদ্বেগের কারণ নয়। তবে কখনও কখনও এই সাধারণ মাথাব্যথাই হতে পারে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ কিংবা টিউমারের মতো ভয়াবহ রোগের প্রাথমিক সতর্কতা। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের এক নিউরোসার্জন ইনস্টাগ্রামে ভাইরাল এক পোস্টে ব্যাখ্যা করেছেন, কীভাবে সাধারণ মাথাব্যথা আর প্রাণঘাতী রোগের ইঙ্গিতবাহী ব্যথার মধ্যে পার্থক্য করা যায়।

তিনি জানিয়েছেন, এমন দুটি প্রধান উপসর্গ আছে যা জানা সবার জন্য জরুরি। কারণ অনেক সময় হঠাৎ শুরু হওয়া বা অস্বাভাবিক প্রকৃতির মাথাব্যথাকে অবহেলা করলে তা মারাত্মক বিপদের কারণ হতে পারে। তাঁর এই সতর্কবার্তা দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, যেখানে বহু মানুষ জানিয়েছেন যে এত সূক্ষ্ম লক্ষণগুলোকেও তাঁরা আগে গুরুত্ব দেননি।

কোন ধরনের মাথাব্যথায় সতর্ক হবেন

নিউরোসার্জনের মতে, সব মাথাব্যথা ভয় পাওয়ার মতো নয়, তবে কিছু নির্দিষ্ট প্যাটার্ন বা ধরণ অবহেলা করা বিপজ্জনক হতে পারে। বিশেষত দুটি লক্ষণকে তিনি ‘রেড ফ্ল্যাগ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, যা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, অ্যানিউরিজম বা টিউমারের মতো গুরুতর সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে।

তিনি ব্যাখ্যা করেন, যদি মাথাব্যথা হঠাৎ করেই ভিন্ন ধরনের মনে হয়—যেমন বজ্রপাতের মতো তীব্র ব্যথা বা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি সময় স্থায়ী হয়—তবে সেটি ব্রেনে রক্তক্ষরণ বা টিউমারের মতো সমস্যার কারণে হতে পারে।

‘থান্ডারক্ল্যাপ হেডেক’ নামে পরিচিত এই ব্যথা হঠাৎ তীব্র, অন্ধকারাচ্ছন্ন যন্ত্রণায় শুরু হয়, যেন মাথায় কিছু আঘাত করেছে। এমন ব্যথা মস্তিষ্কে রক্তনালী ফেটে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয়, যা দ্রুত চিকিৎসা না নিলে স্থায়ী পক্ষাঘাত, কোমা এমনকি মৃত্যুও ডেকে আনতে পারে।

ব্রেন টিউমারজনিত মাথাব্যথার লক্ষণ

বিশেষজ্ঞদের মতে, অধিকাংশ মাথাব্যথার কারণ সাধারণ বিষয় যেমন ডিহাইড্রেশন, মানসিক চাপ বা ঘুমের অভাব। কিন্তু মাথাব্যথা যদি নিয়মিত, স্থায়ী বা পূর্বের চেয়ে ভিন্ন অনুভূত হয়, তবে তা ব্রেন টিউমারের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে।

ব্রেন টিউমারজনিত মাথাব্যথার বৈশিষ্ট্যগুলো সাধারণত এমন হয়:
সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর বা সকালে ব্যথা বাড়ে।
সাধারণ ব্যথানাশক ওষুধে উপশম হয় না।
এর সঙ্গে বমি ভাব, ঝাপসা দৃষ্টি বা দুর্বলতা দেখা দেয়।
সময়ের সঙ্গে ব্যথা ক্রমে বাড়তে থাকে।

যদি নিয়মিত মাথাব্যথার ধরণ হঠাৎ বদলে যায় বা নতুন ধরনের ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। যদিও বেশিরভাগ মাথাব্যথা ক্ষতিকর নয়, তবুও প্রাথমিক পর্যায়ে পরীক্ষা করালে জটিলতা আগেভাগে শনাক্ত করা সম্ভব।

ঘাড় মোচড়ানোর ঝুঁকি

ওই নিউরোসার্জন তাঁর পোস্টে আরও সতর্ক করেছেন ঘাড় মোচড়ানো বা জোরে ঘাড় ঘোরানোর বিপদ সম্পর্কে, যা ব্যথা কমাতে কিছু চিকিৎসক বা থেরাপিস্ট ব্যবহার করে থাকেন। তিনি জানান, এই পদ্ধতি বিরল হলেও মেরুদণ্ডের ধমনী ছিঁড়ে যাওয়ার (vertebral artery dissection) ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, যা মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করে।

তিনি বলেন, “অতিরিক্ত জোরে ঘাড় ঘোরালে ব্রেইনস্টেমে স্ট্রোকের আশঙ্কা থাকে, যা ‘লকড-ইন সিনড্রোম’ নামের ভয়ঙ্কর অবস্থার জন্ম দিতে পারে। এতে মানুষ সচেতন থাকলেও শরীর নড়াতে বা কথা বলতে পারেন না।”

এই অবস্থায় রোগী সম্পূর্ণ সজ্ঞান থাকেন, কিন্তু প্রায় সব পেশি অবশ হয়ে যায়। শুধু চোখ নড়াতে পারেন, বাকিটা অচল হয়ে যায়। মানসিকভাবে সক্রিয় থেকেও নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে না পারা এটিকে আরও ভয়াবহ করে তোলে।

ব্রেনের স্বাস্থ্য ও ঘুমের গুরুত্ব

চিকিৎসকের মতে, শুধুমাত্র লক্ষণ চেনাই নয়, মস্তিষ্কের সুস্থতা বজায় রাখার জন্য যথেষ্ট ঘুমও অত্যন্ত জরুরি। দীর্ঘদিন ঘুমের ঘাটতি মস্তিষ্কের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত করে, স্মৃতিশক্তি দুর্বল করে এবং স্নায়বিক রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিদিন সাত থেকে নয় ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন ঘুম জরুরি, যা মস্তিষ্কের কোষ পুনর্গঠনে সহায়তা করে।

খারাপ ঘুমের অভ্যাস শুধু মাথাব্যথা বাড়ায় না, বরং মস্তিষ্ককে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির মুখে ফেলে দেয়। তাই হঠাৎ শুরু হওয়া বা অস্বাভাবিকভাবে স্থায়ী মাথাব্যথা হলে সেটিকে অবহেলা না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

নিউরোসার্জনের ভাষায়, “যদি মাথাব্যথা হঠাৎ শুরু হয়, আগের চেয়ে আলাদা অনুভূত হয় বা ওষুধে উপশম না হয়, সেটি আপনার শরীরের দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা হতে পারে।”

মাথাব্যথা সাধারণ একটি সমস্যা হলেও, এর প্রকৃতি ও তীব্রতার হঠাৎ পরিবর্তনকে কখনও হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। সময়মতো চিকিৎসা নিলে বড় বিপদ এড়ানো সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *